অর্থনীতি প্রতিবেদক : বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) ২০২৫-২৭ মেয়াদের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেছে ‘ফোরাম’ জোট। ঢাকায় ২৬টি পরিচালক পদের মধ্যে ফোরাম জোট পেয়েছে ২৫টি এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে মোট ভোট পড়েছে ২৫৪টি। এর মধ্যে বাতিল হয় ৬টি ভোট। মোট ৯টি পরিচালক পদের বিপরীতে ৬টিতেই জয়ী হয় এই জোটের প্রার্থীরা। অর্থাৎ জয়ী ৩৫ জনের মধ্যে ৩১ জনই ফোরামের। অপরদিকে সম্মিলিত পরিষদ থেকে জিতেছেন মাত্র চারজন। সম্মিলিত পরিষদ থেকে ঢাকায় একজন এবং চট্টগ্রামে তিনজন প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। ঢাকায় সম্মিলিত পরিষদ থেকে বিজয়ী হন সংগঠনের সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান। এবারের বিজিএমইএ’র নির্বাচনে ভোটযুদ্ধে লড়েন মোট ৭৬ প্রার্থী। ফোরাম ও সম্মিলিত পরিষদ ৩৫টি পরিচালক পদের বিপরীতে প্রার্থী দিয়েছে। বাকি ৬ জন ঐক্য পরিষদের ব্যানারে স্বতন্ত্রভাবে ভোট করছেন। ঢাকা ও চট্টগ্রামের হোটেল রেডিসন ব্লুতে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের সময় ১৫ মিনিট বাড়িয়ে দেওয়ায় শনিবার বিকাল সোয়া ৫টা পর্যন্ত্র ভোটগ্রহণ হয়। পরে গণনা শুরু হয়। ঢাকা ও চট্টগ্রামে মোট ১ হাজার ৮৬৪ জন গার্মেন্ট মালিকদের মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন ১ হাজার ৬৩১ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ১ হাজার ৩৭৭টি এবং চট্টগ্রামে ২৫৪টি ভোট কাস্ট হয়। চট্টগ্রামে ৬টি ভোট বাতিল হয়। ভোটার উপস্থিতি প্রায় ৮৭ শতাংশ। ফোরাম জোটের নেতৃত্ব দেন রাইজিং ফ্যাশনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান (বাবু)। অপরদিকে সম্মিলিত পরিষদের নেতৃত্বে ছিলেন চৈতি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম। ভোটের মাধ্যমে আগামী ২ জুন দুই বছরের (২০২৫-২৭ মেয়াদ) জন্য পোশাক শিল্পের মালিকরা তাদের নেতা নির্বাচিত করবেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার ফোরাম সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় বিজিএমইএর পরবর্তী সভাপতি হচ্ছেন প্যানেল লিডার রাইজিং ফ্যাশনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান (বাবু)। নির্বাচনে এক হাজার ৮৬৪ জন গার্মেন্ট মালিক তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। ফোরামের ঢাকা অঞ্চলের বিজয়ী প্রার্থীরা হলেন-প্যানেল লিডার মাহমুদ হাসান খান (১১৪৯ ভোট), শাহ রাঈদ চৌধুরী (১১২৩), মিজানুর রহমান (১০৬৬), এমএ রহিম (১০১৪), ফয়সাল সামাদ (৯৯২), ইনামুল হক খান (৯৬৬), ভিদিয়া অমৃত খান (৯৫৭), মো. হাসিব উদ্দিন (৯৫১), রেজওয়ান সেলিম (৯৪১), মোহাম্মদ আবদুস সালাম (৯৪০), মো. শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী (৯২৯), নাফিস-উদ-দৌলা (৯১৯), সুমাইয়া ইসলাম (৯০৯), ফাহিমা আক্তার (৮৫৩), মজুমদার আরিফুর রহমান (৮৫০), আনোয়ার হোসেন চৌধুরী (৮৪৯), শেখ এইচএম মোস্তাফিজ (৮৪৭), কাজী মিজানুর রহমান (৮৪৫), জোয়াদ্দার মোহাম্মদ হোসনে কামার আলম (৮৪২), এবিএম শামছুদ্দিন (৮৪০), আসেফ কামাল পাশা (৮৩৬), ড. রশীদ আহমেদ হোসাইনী (৮২৪), ফারুক হাসান (৮১৩, সম্মিলিত পরিষদ), রুমানা রশীদ (৮১১), মোহাম্মদ সোহেল (৮০৭), সামিহা আজিম (৭৯৯)। ফোরাম জোটের চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিজয়ী প্রার্থীরা হলেন-সেলিম রহমান (১০৫৮), এম মহিউদ্দিন চৌধুরী (৯৭৯), সাকিফ আহমেদ সালাম (৯৪৪), মো. শরীফ উল্লাহ (৯২৭), মোহাম্মদ রফিক চৌধুরী (৯১৯), এনামুল আজিজ চৌধুরী (৮৯০)। বাকি তিনটি পদে জয়ী হয়েছেন-সম্মিলিত পরিষদের সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর (৯৫০), এসএম আবু তৈয়ব (৮৩৫) ও রাকিবুল আলম চৌধুরী (৮৩১)। ফোরামের মহাসচিব ড. রশিদ আহমেদ হোসাইনী বলেন, বিজিএমইএ দীর্ঘদিন দলীয়ভাবে পরিচালনা হয়েছে। এবার কোনো প্রভাব ছাড়া নির্বাচন হয়েছে। ভোটাররাও আগ্রহ নিয়ে ভোট প্রদান করেছে। জয়ের জন্য আমরা শতভাগ আশাবাদী ছিলাম। ফোরাম নেতা ও প্রার্থী যমুনা গ্রুপের পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম রোজালিন বলেন, একটি স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরা একটি নির্ভরযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য ফলও পেয়েছি। নির্বাচনে বিজয়ী ফোরামের প্যানেল লিডার মাহমুদ হাসান খান বাবু তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ফোরাম ঘোষিত ইশতেহারে অগ্রাধিকারগুলো বলা আছে। সে মোতাবেক আমরা কাজ করবে। এই মুহূর্তের শিল্পের অগ্রাধিকার হচ্ছে-গ্যাস-বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করা। এছাড়া আমাদের সামনে যখন যে চ্যালেঞ্জ আসবে আমরা সেটি নিয়ে কাজ করব। আমরা মালিকের কল্যাণ নিয়ে কাজ করব, শ্রমিকের কল্যাণ নিয়ে কাজ করব। সামনে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন আছে, মার্কিন ট্যারিফ ইস্যু আছে-এগুলোর পাশাপাশি শ্রমিক কল্যাণ তহবিল এবং এক্সিট প্ল্যান নিয়ে কাজ করব। তিনি আরও বলেন, বিজিএমইএর বড় সৌন্দর্য হচ্ছে নির্বাচনের আগে এক-দুই মাস আমাদের মধ্যে পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকে। নির্বাচনের পরে সবাই একসঙ্গে কাজ করি। আমি মনে করি যেই ৭৬ জন নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, তারা সবাই বিজয়ী হয়েছেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মাহমুদ হাসান বলেন, সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে চাই। কারণ দিনশেষে বিজিএমইএ সদস্যদের সংগঠন। এটার সঙ্গে দেশের অর্থনীতি জড়িত। পোশাক শিল্প হচ্ছে লাইফলাইন অব দ্য ইকোনমি। সুতরাং একসঙ্গে কাজ করতে পারলে দেশের ইকোনমি ভালো হবে এবং দেশ এগিয়ে যাবে। নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, ‘সুষ্ঠু ভোট হয়েছে। নির্বাচনে প্রার্থীদের আচরণেও আমি খুশি। সকালে বহিরাগত কিছু ভেতরে জটলা পাকানোর চেষ্টা করলেও পুলিশের সহযোগিতায় তাদেরকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা স্বচ্ছ নির্বাচনের একটা উদাহরণ সৃষ্টি করেছি। আশা রাখছি আগামীতেও নির্বাচন এ রকমই হবে। ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, ‘এ নির্বাচন জাতির কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। ছোট ছোট নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা দেশবাসীর কাছে এই মেসেজ দিতে চাই যে, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী আগামী জাতীয় নির্বাচন সবচেয়ে সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন হবে। তার নমুনা হিসেবে আমরা এখন থেকে কাজ শুরু করছি।’ প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিজিএমইএ’র সভাপতি আব্দুল মান্নান কচি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। অজ্ঞাতস্থান থেকে পদত্যাগ পাঠান তিনি। এরপর বিজিএমইএ’র দায়িত্ব নেন ডিজাইনটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার রফিকুল ইসলাম। খন্দকার রফিকের নেত্বত্বে পুনর্গঠিত বোর্ড পোশাক খাতের অস্থিতিশীলতা সামাল দিতে না পারায় ২০ অক্টোবর রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এদিকে এবারের তালিকা থেকে অস্তিত্বহীন ৬৩২ ভোটার বাদ পড়েছে। নির্বাচনে নিয়ন্ত্রণে অদৃশ্য শক্তির দৌড়ঝাঁপ নেই।পতিত সরকারের সময় নিয়ন্ত্রিত আর কারচুপির যে নির্বাচন হয়েছে, এবার তার পুরোপুরি ব্যতিক্রম।