আ’ লীগ শাষনামলে 'সুবিধাভোগী' জসিমকে নিয়ে বেকায়দায় চসিক।
সরকারি প্রকল্পসহ চসিকের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ জসিমের হাতেই!
১৭ বছরের কর্মজীবনে গড়েছেন অডেল সম্পদ,তদন্তে দুদক
পিডিসহ একাধিক দায়িত্ব, প্রশ্ন উঠেছে যোগ্যতার!
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৫ আগষ্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে অবসান হয় দেড় দশকের জুলুম-জালিয়াতির শাসন।
ঘটনাবহুল ২০২৪ সালের এ স্বাধীনতার পর সরকারি ও বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে স্বৈরশাসনের অবসান ঘটলেও অনিয়ম দুর্নীতির বেড়াজাল থেকে কোনভাবেই যেন বের হতে পারছেনা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।
রাষ্ট্রের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটিতে এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে আ’ লীগ শাষনামলের সবচেয়ে সুবিধাভোগীরাই। ডিমোশন নয়, বরং প্রমোশন ও অদৃশ্য ক্ষমতাবলে চসিককে বাবদাদার সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছেন এসব অসাধু কর্মকর্তারা।
তেমনই একজন হলেন চসিকের প্রকৌশল বিভাগের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। যার বিরুদ্ধে রয়েছে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ। যাকে চসিকে বহুমাত্রিক দুর্নীতির বরপুত্র হিসেবেই আখ্যা দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের একাধিক কর্মকর্তা।
তাদের মতে, অদৃশ্য ক্ষমতাবলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সর্ববৃহৎ প্রকল্প “চট্টগ্রাম সিটি করর্পোরেশনের আওতায় এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়কসমূহ উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’(এডিপি-২৫০০ কোটি টাকা)” প্রকল্পের দায়িত্ব পেয়ে যান প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন।
শুধু তাই নয়, চসিকের একাধিক কাজের ঠিকাদারির নিয়ন্ত্রণও এখন জসিমের হাতেই। পুরনো কি নতুন, অত্যন্ত চালাক ও চাটুকারিতার মাধ্যমে সব মেয়রেরই আশির্বাদপুষ্ট হয়ে যান জসিম। বর্তমান সময়ে তার দৌরাত্ম্য যেন আরো কয়েকগুন বেড়ে গেছে। সমগ্র সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি দপ্তরেই এখন বিচরণ রয়েছে তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জসিমের।
একজন ডিপ্লোমাধারী প্রকৌশলী হয়েও বিদ্যুৎ বিভাগের তত্ত্বাবধাক প্রকৌশলীর পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন এবং চসিকের বিভিন্ন দপ্তরের একাধিক দায়িত্ব নিয়েও জসিমের যোগ্যতার প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্র জানায়, আওয়ামী লীগের শাষনামলের ১৬ বছরে তিনি ছিলেন সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী। আবার সরকার পতনের পর তিনি এখন আগের চেয়ে বেশি সুবিধা পাচ্ছেন। এই অতিরিক্ত সুবিধা ছাত্র জনতার আন্দোলনের সাথে তামাশা বলেও মনে করছেন অনেকে।
আবার অনেক কর্মকর্তারা নাম না প্রকাশ করার সর্তে বলেছেন, জসিম তার ১৭ বছরের কর্মজীবনে শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক বনে গেছেন। ফলে তিনি এখন কাউকেই পরোয়া করেন না, ধরাকে সরা জ্ঞান মনে করছেন।
তবে একাধিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে জসিমের অনিয়ম দুর্নীতি ও সম্পদ এবং আয়ের উৎস খুঁজে বের করতে সম্প্রতি অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
কে এই জসিম?সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সাল থেকে আসা-যাওয়া, ২০০৬ সালে ৮ হাজার টাকা বেতনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে সড়ক পরিদর্শক অস্থায়ীভাবে নিয়োগ পান মো. জসীম উদ্দিন। এরপর ২০০৯ সালে বিভাগের ১১ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে পেছনে ফেলে হাতিয়ে নেন নির্বাহী প্রকৌশলীর পদ। ২০১১ সালের ২০ এপ্রিল তাকে অবৈধভাবে উপ সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) পদে পদায়ন ও চাকরি স্থায়ী করেন তৎকালীন মেয়র মঞ্জুরুল আলম ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শামসুদ্দোহা।
পরবর্তীতে কোন ধরনের পদোন্নতি বোর্ড গঠন না করে জ্যেষ্ঠতা উপেক্ষা করে ১১ জন উপসহকারী প্রকৌশলীকে ডিঙ্গিয়ে ২০২০ সালে আবারও সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) পদে পদোন্নতিসহ স্কেল প্রদান করেন তৎকালীন মেয়র আলহাজ্ব আ.জ.ম. নাছির উদ্দীন।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারী নিয়োগবিধি -২০১৯ এর শর্ত অনুসরণ না করে বিধিবহির্ভূতভাবে ২০২২ সালের ১৩ নভেম্বর তাকে সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) হতে নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) পদে পদোন্নতি প্রদান করেন।
জানা গেছে, নির্বাহী প্রকৌশলী পদোন্নতির ক্ষেত্রে ৭ বছরের কর্ম অভিজ্ঞতার বাধ্যবাদকতা থাকলেও তার ক্ষেত্রে তার ক্ষেত্রে মাত্র ২ বছর ৯ মাস ২ দিনের মাথায় পদোন্নতি প্রদান করেন যা কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা-২০১৯ সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
পরে কর্তৃপক্ষ তাকে আরো বিশেষ সুবিধা প্রদান করে গত ১৬/০১/২০২৪ তারিখে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সিভিল) হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করেন যা শুধু চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনই নয়, সারাদেশের ইতিহাসে বিরল।
সবশেষ জুলাই আন্দোলন শেষে গেল ২০২৪ সালের ৫ আগষ্টের পর দুর্নীতিগ্রস্থ একাধিক কর্মকর্তার ক্ষমতা খর্ব হলেও বহাল তবিয়তে আগের চেয়েও দ্বিগুন বেশি ক্ষমতাবান হয়ে উঠেছেন মো. জসিম উদ্দিন। বর্তমানে চসিকের প্রকৌশল বিভাগের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সিভিল) হিসেবেই দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
পিডিসহ একাধিক দায়িত্ব, প্রশ্ন উঠেছে যোগ্যতার! চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ২৫০০ কোটি টাকার প্রকল্পটির দায়িত্বের জন্য বিএসসি বাধ্যতামুলক হলেও ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী জসিম উদ্দিনকেই পিডি নিয়োগ দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কতৃপক্ষ।
প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগের সম্পুর্ণ ক্ষমতা মন্ত্রণালয়ে গঠিত ৮ সদস্যের কমিটির হাতে থাকলেও এক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। নিয়ম না মেনেই পিডির দায়িত্ব দেয়ায় জসিমের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে।
এছাড়াও বিদ্যুৎ বিভাগের তত্ত্বাবধাক প্রকৌশলীর পদে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার বাধ্যবাদকতা থাকলেও তা না মেনে একজন ডিপ্লোমাধারী প্রকৌশলীকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। একাই এতগুলো গুরুত্বপূর্ণ পদ কিভাবে পেয়েছেন তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে নগর ভবনে।
সুত্র জানায়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সর্ববৃহৎ প্রকল্প “চট্টগ্রাম সিটি করর্পোরেশনের আওতায় এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়কসমূহ উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’(এডিপি-২৫০০ কোটি টাকা)” প্রকল্পটি ’আড়াই হাজার কোটি প্রকল্প’ নামে পরিচিত।
এই প্রকল্পের জন্য গত ২৫ মার্চ ২০২৫ ইংরেজীতে চসিকের এক অফিস আদেশের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ২ ও উপ প্রকল্প পরিচালক জসিম উদ্দিনকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ২ ও প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগ করা হয়েছে।
যেখানে স্বাক্ষর করেছেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। কিন্তু ২০১৬ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত পরিপত্র অনুযায়ী এই ক্ষমতা মেয়রের নেই।
পরিপত্রে বলা হয়েছে পিডি নিয়োগের ক্ষেত্রে ৮ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। যেখানে সিনিয়র সচিব বা সচিব পদমর্যাদার একজন আহবায়ক, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ এর পরিকল্পনা অনুবিভাগ প্রধান/ অধিশাখা প্রধান/শাখা প্রধান সদস্যসচিব থাকবে।
অন্য ৬ সদস্যরা হলেন পরিকল্পনা কমিশনের প্রতিনিধি, আইএমই প্রতিনিধি,জনপ্রশাষন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, অর্থ বিভাগের প্রতিনিধি, ইআরডি প্রতিনিধি ও বাস্তবায়নকারী সংস্থা প্রধান।
বাস্তবায়নকারী সংস্থা ৩ জন কর্মকর্তার নাম ওই কমিটিকে সুপারিশ করতে পারবে। সেখান থেকে যাচাই বাছাই করে কমিটি পিডি নিয়োগে সুপারিশ করবে কমিটি।
পরিপত্রে আরো বলা হয়েছে, কমিটির সুপারিশ ব্যতীত কোন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ করা যাবে না। পদাধিকার বলে কোন কর্মকর্তাকে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ প্রদান করা যাবে না।
তবে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে বাস্তবায়নকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ পরিহার করতে হবে। জসিম উদ্দিনকে নিয়োগের ক্ষেত্রে এসব বিষয়গুলো মানা হয়নি। এছাড়া তার একাডেমিক যোগ্যতায়ও ঘাটতি রয়েছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ”প্রকল্প মুলত সরকারের টাকায় বাস্তবায়ন হয়, এটা কর্পোরেশনের ফান্ড নয়।
এক্ষেত্রে পিডি নিয়োগের দায়িত্বও সরকারের। যেকোন প্রকল্পে পিডি নিয়োগের জন্য মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি আছে সেই কমিটিই পিডি নিয়োগের ক্ষমতা রাখেন।
সারাদেশের কোথাও মেয়র পিডি নিয়োগ দিয়েছেন এরকম ঘটনা আমার জানা নেই। আর চসিকের পিডি নিয়োগের বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই।
যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন চসিকের অধিকাংশ ঠিকাদারিএকদিকে চসিকের বিভিন্ন দপ্তর জুড়ে ডিপ্লোমা প্রকৌশলী জসিমের রামরাজত্ব। অপরদিকে তার পরিবারের সদস্য ও ভাইকে দিয়ে গড়ে তুলেছেন ঠিকাদারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আড়ালে থেকে ভাই ও পরিবারের সদস্যদের দিয়ে সুকৌশলে হাতিয়ে নিয়েছে সিটি কর্পোরেশনের একাধীক কাজও। এমনকি সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব এ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট থাকা সত্ত্বেও মাল কেনা হতো জসীম উদ্দিনের নিজস্ব কারখানা থেকে।
স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) ২০০৯ আইন অনুযায়ী, কর্পোরেশনের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক স্বজ্ঞানে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, স্বয়ং বা কোনো অংশীদার মারফত কর্পোরেশনের কোনো ঠিকাদারিত্বে স্বত্ব বা অংশ নেওয়া বেআইনি হলেও এসব আইনের কোন তোয়াক্কাই করেন না জসিম উদ্দিন।
সূত্রে জানা গেছে, চাকরির পাশাপাশি তথ্য গোপন করে ছোট ভাই সাইফুল ইসলামকে দিয়ে সিটি কর্পোরেশনের ঠিকাদারি কাজ করিয়ে যাচ্ছেন মো. জসীম উদ্দিন। তার ভাইয়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম ‘ফাহিম কন্সট্রাকশন’।
একইসঙ্গে নগরীর সাগরিকা রোডে ‘আমিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার এ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট’ নামে কারখানা রয়েছে জসীম উদ্দিনের। যেটির পরিচালনা করছেন তার আরেক ভাই দিদারুল ইসলাম। যদিও কাগজে-কলমে ওই কারখানার মালিক দেখানো হয়েছে নুরুল আমিন নামের জনৈক ব্যক্তিকে।
শত কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন চসিকের এ প্রকৌশলীচট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সিভিল) মো. জসীম উদ্দিন লাঘামহীন ঘুষ দুর্নীতির মাধ্যমে মাত্র ১৬ বছরের কর্মজীবনে হাতিয়ে নিয়েছে শত কোটি টাকা। এই টাকা দিয়ে ক্রয় করেছেন নামে বেনামে অঢেল সম্পদ।
এরমধ্যে নগরীর নাসিরাবাদ এলাকার আল-ফালাহ গলিতে ‘আইএস অবকাশ’ নামের একটি ভবনে অন্তত ৪টি ফ্ল্যাট রয়েছে তার। প্রতিটি ফ্ল্যাটের মূল্য প্রায় কোটি টাকার উপরে।
নগরের খুলশী এলাকায় ১২ কাঠা জায়গার ওপরে নির্মাণাধীন রয়েছে তার ১০তলার একটি বহুতল ভবন। যার বাজারমূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা। তার রয়েছে একাধিক দামি প্রাইভেট গাড়িও।
এছাড়া নগরীর পাঁচলাইশের হামজারবাগ হামজার খাঁ লেনের শাহ আমানত আবাসিকে স্ত্রী ও শ্যালিকার নামে রয়েছে চার কাঠা করে আট কাঠার দু’টি প্লট। সেখানে একটি প্লটে ৮ তলার বহুতল ভবন উঠছে। আরেকটিতে সেমিপাকা ঘর রয়েছে।
স্থানীয়দের মতে, নির্মাণাধীন ভবন ও জায়গার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা। এই আবাসিকের প্রায় ২৮টি ভবনের নেতৃত্ব জসিমের হাতে।
কর্মস্থলে অনিয়ম-দূর্ণীতি এবং জসিমের সম্পদের অনুসন্ধান করছে দুদকচট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে (চসিক) পুঁজি করেই সম্পদের পাহাড় গড়েছেন চসিকের প্রকৌশল বিভাগের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সিভিল) মো. জসিম উদ্দিন। অবৈধভাবে নামে বেনামে গড়ে তোলা সম্পদের পাহাড়ের হিসেব এবং আয়ের উৎস খুঁজতে সম্প্রতি মাঠে নেমেছে দুদকের অনুসন্ধানী টিম। তদন্ত করছেন কর্মস্থলের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগও।
এর আগেও ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ‘চট্টগ্রামে ‘আলাদীনের চেরাগ’ সিটি কর্পোরেশনের এক চাকুরের হাতে, ১৬ বছরে অর্ধশত কোটিরও বেশি সম্পদ’—শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় চট্টগ্রামের একটি পত্রিকায়। এ নিয়ে গত ২৭ আগস্ট প্রকৌশলী মো. জসীম উদ্দিনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুদক।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জসীম উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র, কাগজপত্রাদি সরবরাহ করার অনুরোধ করেছে দুদক। তার বিরুদ্ধে সমস্ত রেকর্ডপত্র দুদকের কাছে সরবরাহের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে অনুরোধ করা হয়।
সিটি কর্পোরেশনকে দেওয়া দুদকের চিঠিতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জসীম উদ্দিন চাকুরিতে যোগদানের পর থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রদেয় বছর ভিত্তিক বেতন, বোনাস ও বিলের বিবরণী, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক তার সম্পদের দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী সরবরাহ করতে বলা হয়।
এছাড়া তার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘ফাহিম কন্সট্রাকশন’র স্বত্বাধিকারী সাইফুল ইসলামকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক যে সমস্ত কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে তার রেকর্ডপত্র সরবরাহ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক ‘আমিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার এসফল্ট প্ল্যান্ট’ স্বত্বাধিকারী দিদারুল ইসলামকেও যে সমস্ত মালামাল ক্রয় বাবদ অর্থ প্রদান করেছে তার রেকর্ডপত্র সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে চসিকের সচিব মো. আশরাফুল আমিন কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। অপরদিকে নানান অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে মতামত জানার জন্য আড়াই হাজার কোটি টাকা প্রকল্প পরিচালক মো. জসিম উদ্দিনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ ব্যপারে জানতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের অফিসে একাধিকবার গিয়েও দেখা না হওয়ায় বক্তব্য নেওয়া হয়নি।